স্বাধীন সকাল ডেস্ক: লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা প্রায় ১০০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। অপর দিকে ইরানপন্থি গোষ্ঠীটি দাবি করেছে, তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে গত দুই দিনে ইসরায়েলের ২০ সেনা আহত বা নিহত হয়েছে। বৈরুতের পাশাপাশি সিরিয়া-লেবানন মহাসড়কেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। হাইফাতে ২০টি রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ। এছাড়া লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় ৩৭টি গ্রাম ও শহরের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১০০ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের সময় সংঘর্ষে এসব যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন।
আইডিএফ জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন গ্রামে পরিচালিত অভিযানে হিজবুল্লাহর ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং গোলাবারুদসহ অস্ত্রের মজুত পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি ১৮৮তম আর্মার্ড ব্রিগেডের সেনারা একটি গ্রাম থেকে এগুলো উদ্ধার করে।
ইসরায়েলি শহর হাইফা, জিখরন ইয়াকভ, কায়সারিয়া ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় রকেট হামলার সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বেজেছে। এছাড়া, গ্যালিলি অঞ্চলের একাধিক গ্রামেও একই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে রকেট হামলার শঙ্কায় আতঙ্ক বিরাজ করেছে।
আইডিএফ বলছে, গত এক ঘণ্টায় লেবানন থেকে প্রায় ২০টি রকেট ইসরায়েলের হাইফা অঞ্চলের দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই প্রতিরোধ করা হয়েছে। বাকিগুলো জনশূন্য এলাকায় আঘাত হেনেছে। সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে কোনও প্রাণহানি বা গুরুতর ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে আইডিএফ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথা জানিয়েছে।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় ৩৭ গ্রাম ও শহর খালি করতে ইসরায়েলি নির্দেশ
আইডিএফ দক্ষিণ লেবাননের ৩৭টি গ্রাম ও শহরের বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা খালি করার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের উত্তর দিকে আওয়ালি নদীর ওপারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। কয়েক দিন আগে, আইডিএফ দক্ষিণ লেবাননের কয়েক ডজন এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলে। এর মধ্যে লিতানি নদীর উত্তরেও কয়েকটি অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আইডিএফের আরবি ভাষার মুখপাত্র কর্নেল আভিচাই আদ্রায়ি বলেছেন, হিজবুল্লাহর কর্মকাণ্ডের কারণে আইডিএফকে পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। আইডিএফ সাধারণ জনগণকে ক্ষতি করতে চায় না। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত বাড়িঘর ছেড়ে যেতে হবে। যারা হিজবুল্লাহ যোদ্ধা বা তাদের অস্ত্রাগারের আশপাশে থাকবেন, তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন।
আইডিএফ জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় এলাকায় ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হবে। লেবাননের পরিবহনমন্ত্রী আলী হামিয়ে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে লেবাননের মাসনা সীমান্তে একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রায় ১২ ফুট চওড়া একটি গর্ত তৈরি হয়েছে। লেবাননের এই অংশে অবস্থিত সীমান্তের মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে লেবাননের নাগরিকদের সিরিয়ায় যেতে বাধা সৃষ্টি করছে। এর আগে, আইডিএফ মুখপাত্র কর্নেল আভিচাই আদ্রায়ি বলেছিলেন, হিজবুল্লাহ এই সীমান্ত পয়েন্টটি অস্ত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহার করছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অস্ত্র চালান বন্ধে আইডিএফ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিছপা হবে না।
হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, বৃহস্পতিবার মারুন আল-রাস ও ইয়ারুন এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে তারা ২০ জন ইসরায়েলি সেনা ও কর্মকর্তাকে হত্যা বা আহত করেছে। এর আগে বুধ ও বৃহস্পতিবার আরও ১৭ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হিজবুল্লাহ।
তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দাবি অনুসারে, বুধ ও বৃহস্পতিবার লেবাননে সংঘর্ষে তাদের ৯ জন সেনা নিহত হয়েছে। হিজবুল্লাহর দাবি ও ইসরায়েলি তথ্যের মধ্যে এই পার্থক্য সংঘাতের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি অভিযান ও হিজবুল্লাহর পাল্টা হামলার ফলে উত্তেজনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসরায়েলি সামরিক কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর থাকলেও হিজবুল্লাহর পাল্টা আঘাত এই সংঘাতকে আরও বিস্তৃত করার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, আল মনিটর, প্যালেস্টাইন ক্রনিকল।