স্বাধীন সকাল ডেস্ক: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগে গতকাল শনিবার ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর মারা গেছে। আগে তার কোনো অসুস্থতা ছিল না। কিন্তু খাবারের অভাবে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে সে মারা যায়। কিশোরের স্বজনেরা ও চিকিৎসাকর্মীরা এমনটাই বলেছেন।
ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজা উপত্যকার মানুষ তীব্র সংকটে আছে। সেখানকার মানুষ এখন খাবারের জন্য মরিয়া। ইসরায়েল সেখানে ত্রাণ পৌঁছাতে দিচ্ছে না।
শনিবার মারা যাওয়া ওই কিশোরের নাম আতেফ আবু খাতের। গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের একটি সূত্র আল–জাজিরাকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
আল–জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, আতেফ স্থানীয়ভাবে খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ন ছিল। কিন্তু খাবার খেতে না পারায় তার ওজন কমে যায়। প্রচণ্ড অপুষ্টিতে ভোগার পর অবশেষে সে মারা যায়। হানি আরও বলেন, আতেফ গাজায় তীব্র অপুষ্টির শিকার হাজার হাজার মানুষের একজন মাত্র।
আল–জাজিরার যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আতেফের পরিবার তাকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে। সেখানে তার শীর্ণকায় মরদেহ দেখা যাচ্ছে। তাঁর মুখ ক্যামেরা থেকে আড়াল রাখা হয়েছে।
আতেফ আবু খাতেরের পরিবার বলেছে, মৃত্যুর সময় তার ওজন কমে মাত্র ২৫ কেজি হয়েছিল। আগে তার ওজন ছিল ৭০ কেজি। ২৫ কেজি ওজন সাধারণত নয় বছর বয়সী শিশুদের হয়ে থাকে। আতেফের গালে একটুও চর্বি ছিল না। মুখমণ্ডলের হাড়গুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল।
ভিডিওতে দেখা যায়, আতেফের এক আত্মীয় তার পাঁজরের প্রতিটি হাড় আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখাচ্ছিলেন। তার পাঁজরের হাড়গুলো যেন গোনা যাচ্ছিল।
উইসাম শাবাত নামের এক সাংবাদিক ভিডিওটি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন না খেতে পেরে এবং চিকিৎসার অভাবে আতেফের শরীরে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিয়েছিল। আতেফ যখন হাসপাতালে আসে, তখন তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন ছিল। শেষ পর্যন্ত সে মারা যায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬৯ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে বা অপুষ্টিতে ভুগে মারা গেছে। এর মধ্যে ৯৩ জনই শিশু।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় গাজায় ত্রাণ সরবরাহের ওপর ইসরায়েলি বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হলেও ফিলিস্তিনিরা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। তাদের পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহলের ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইসরায়েল বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণসহায়তা বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে উড়োজাহাজ থেকে নিচে খাবার ফেলার মতো ব্যবস্থাও আছে।