স্বাধীন সকাল ডেস্কঃ নিউইয়র্ক নগরের মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে।
কুইন্স থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট ও নিউইয়র্ক রাজ্যের আইনসভার সদস্য জোহরান তাঁর নির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্ক শহরজুড়ে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত করা, সরকারি অর্থায়নে শিশুসেবা প্রদান এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘দ্রুত ও বিনা মূল্যে’ গণপরিবহন চালুর মতো প্রগতিশীল নীতিগুলোর পক্ষে কথা বলেন।
প্রাইমারি ভোটে নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ৩৩ বছর বয়সী জোহরানের পেছনে দাঁড়িয়েছেন এবং গত ২৫ জুন অভূতপূর্বভাবে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে দেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে জনমত জরিপে মাত্র ১ শতাংশ সমর্থন পাওয়া তুলনামূলক এই অজানা প্রার্থীই নিউইয়র্কের ছয় লাখ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীর অনেককেসহ এক বড় ভোটার গোষ্ঠীকে একত্র করতে সক্ষম হন।
কিন্তু জোহরানের এ অপ্রত্যাশিত জয়ের পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনদের একটি অংশ তাঁকে প্রকাশ্য নিশানায় পরিণত করেছে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা একজন মুসলিম প্রার্থী চায় না এবং কখনো তাঁকে ভোট দেবে না।
গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কুইন্সে এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে একজন হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থী জোহরানকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন।
স্বাধীন সকাল ডেস্কঃ ঘৃণাভাষণ ও ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা প্রসঙ্গ
ওই অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা কাজল হিন্দুস্তানি নামে পরিচিত কাজল শিংগালা মেয়রপ্রার্থী জোহরানকে ‘জিহাদি জম্বি’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তাঁকে মেয়র নির্বাচিত করা হলে নিউইয়র্ক হয়ে উঠবে আরেকটি পাকিস্তান। ‘জম্বি’ বলতে মৃত ব্যক্তি জীবিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্ট এক কাল্পনিক ভয়ংকর প্রাণীকে বোঝানো হয়।
ভারতের শীর্ষ ১০ বিদ্বেষী বক্তার তালিকায় থাকা শিংগালার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট মুসলিমবিদ্বেষী কনটেন্টে (আধেয়) ভরা। তিনি মুসলিম পুরুষদের সন্ত্রাসী, ধর্ষক ও ‘লাভ জিহাদি’ বলে আখ্যা দেন। ‘লাভ জিহাদ’ হলো একটি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব। এ তত্ত্বমতে, মুসলিম পুরুষেরা হিন্দু নারীদের ফাঁদে ফেলে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করছেন।
ঘৃণাভাষণে সাড়া দিয়ে শত শত দর্শক অনুষ্ঠানে করতালিতে ফেটে পড়েন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে গুজরাটি সমাজ এবং এতে নিউইয়র্কের বৈষ্ণবমন্দির, ব্রাহ্মণ সমাজসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন সমর্থন দেয়। বক্তব্যে শিংগালা ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা প্রসঙ্গ তোলেন। ওই দাঙ্গাকে জোহরান এক মেয়র ফোরামে ‘মুসলিম গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
সেই দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জোহরান তাঁকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে আখ্যায়িত করেন।
মোদিকে ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগপর্যন্ত প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, তিনি গুজরাটে মানুষের জীবন, স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সমতার অধিকার লঙ্ঘন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
স্বাধীন সকাল ডেস্কঃ তবে এতেও গুজরাটি সমাজ মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। ২০১২ সালে নিষেধাজ্ঞা চলাকালেই সংগঠনটির তৎকালীন সহসভাপতি মানিকান্ত প্যাটেল বলেছিলেন, মোদির সঙ্গে তাঁর ‘নিয়মিত যোগাযোগ’ রয়েছে।
মিথ্যা, ষড়যন্ত্র ও মুসলিমবিদ্বেষ
শিংগালা আরও দাবি করেন, জোহরান নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক হয়ে উঠবে লন্ডনের মতো এবং হিন্দু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তা হবে হুমকি। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান একজন মুসলিম।
মেয়র হওয়ার পর থেকে সাদিক খান ইসলামবিদ্বেষী উগ্রপন্থীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন; যদিও লন্ডনে খুনের হার কমেছে, গণপরিবহনে উন্নতি হয়েছে এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনা মূল্যে খাবার চালু হয়েছে।
শিংগালা তাঁর বক্তৃতার বড় অংশজুড়ে মুসলিমদের ‘হুমকি’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি অনুষ্ঠানে আসা ব্যক্তিদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে, মুসলিমদের তৈরি পণ্য বর্জন করতে, কন্যাদের ‘লাভ জিহাদ’ থেকে বাঁচাতে এবং হিন্দু স্বার্থ রক্ষায় আরও হিন্দু নেতা তৈরির আহ্বান জানান।
মানবাধিকার সংগঠন হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটসের নির্বাহী পরিচালক সুনিতা বিশ্বনাথ বলেন, শিংগালা ভারতের ঘৃণার ভাষণকে যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
‘এমন চরমপন্থী বক্তব্য যে গুজরাটি সমাজের মতো মূলধারার সাংস্কৃতিক সংগঠনে জায়গা পাচ্ছে, সেটি দুঃখজনক,’ বলেন সুনিতা বিশ্বনাথ।
সুনিতা আরও জানান, কার্নেগি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন, এমনকি হিন্দু মার্কিনরাও এমন ঘৃণার রাজনীতি সমর্থন করেন না।
‘এ কারণেই কাজল হিন্দুস্তানির মতো সুযোগসন্ধানী ঘৃণা প্রচারকারীদের গোপন বৈঠক করতে হয়। আমরা “সভেরা” (দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা সংগঠন) ও হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটস একসঙ্গে থেকে ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব,’ বলেন সুনিতা।
নিউইয়র্কের মেয়র কোন অবস্থানে
জোহরান মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস অনুষ্ঠানের পোস্টারে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘোষিত ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তিনি উপস্থিত হননি।
খবরে জানা গেছে, অন্তত দুই ডজন আন্তধর্মীয় সংগঠন মেয়র অ্যাডামসকে একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে এ অনুষ্ঠানে না যাওয়ার এবং এ ধরনের বিদ্বেষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
নিউইয়র্ক ফোকাসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুজরাটি সমাজের সভাপতি হর্ষদ প্যাটেল গত সপ্তাহে অ্যাডামসের পুনর্নির্বাচনী প্রচারে নিজের বাড়িতে একটি অর্থ সংগ্রহ অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। সেখানে মেয়রের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
তবে অ্যাডামসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি জ্যাকারি নোসানচুক বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি মেয়রের নির্ধারিত সূচিতে নেই এবং তিনি এতে অংশ নিচ্ছেন না।’
স্বাধীন সকাল ডেস্কঃ মিডল ইস্ট আইয়ের প্রশ্নে মেয়রের দপ্তর ও গুজরাটি সমাজ—কেউ নিশ্চিত করেনি যে অ্যাডামস প্যাটেলের বাড়ির ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কি না।
সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিচয়ের ওপর আঘাত
শিংগালার ওই আক্রমণ ছিল জোহরানকে লক্ষ্য করে কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দীর্ঘদিনের আক্রমণের সর্বশেষ সংযোজন। তাঁর মুসলিম পরিচয়কে কেন্দ্র করে জোহরানকে ‘জিহাদি’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
তবে মূলত নরেন্দ্র মোদির সমালোচনার কারণেই ভারতীয় রাজনীতিকেরা দল-নির্বিশেষে জোহরানকে ‘ভারতবিরোধী’ বলে প্রচার করছেন।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংসদ সদস্য ও সাবেক অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত ২৫ জুন এক পোস্টে মিথ্যা দাবি করেন যে, জোহরান টাইমস স্কয়ারে একটি বিক্ষোভে হিন্দুদের গালি দিয়েছেন এবং তাঁদের দেবতা রামের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে জোহরান ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। ষোড়শ শতকে নির্মিত এ মসজিদ ১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভেঙে ফেললে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হন। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলমান।
রনৌত পোস্টে লেখেন, ‘ওর (জোহরান) কথা শুনলে পাকিস্তানির মতো মনে হয়। হিন্দু পরিচয় কোথায় গেল? এখন সে হিন্দুধর্ম মুছে ফেলতে চায়। সর্বত্র একই দৃশ্য!’
অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা অভিষেক সিংভি গত ২৬ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘যখন জোহরান মামদানি মুখ খোলেন, পাকিস্তানের পিআর টিম ছুটি নেয়। ভারতের এমন কোনো শত্রুর দরকার নেই, যখন নিউইয়র্ক থেকে এমন “মিত্র” আমাদের বিরুদ্ধে কল্পিত কথা ছড়াচ্ছেন।’যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবাসী হিন্দুত্ববাদীদের প্রভাব
জোহরানের বিরুদ্ধে ঘৃণাত্মক বক্তব্য-বিবৃতির বেশির ভাগই ভারত থেকে এলেও ভারতীয় মার্কিনদের একাংশও এতে সক্রিয় হয়েছে। উগ্রপন্থী ভারতীয় রাজনীতিতে প্রভাবিত এ গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারে নেমেছে।
প্রাইমারি নির্বাচনের সময় ‘ইন্ডিয়ান আমেরিকানস ফর কুমো’ নামে নিউ জার্সিভিত্তিক একটি গোষ্ঠী কুমোর পক্ষে হাজার হাজার ডলার খরচ করে। তারা ভারতীয় একটি রেডিও চ্যানেলে জোহরানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায় এবং নিউইয়র্কের আকাশে একটি ব্যানার ওড়ায়। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘গ্লোবাল ইন্তিফাদা (ইন্তিফাদা বলতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের অভ্যুত্থানকে বোঝায়) থেকে এনওয়াইসি (নিউইয়র্ক নগর) বাঁচাও, জোহরানকে প্রত্যাখ্যান করো।’
এ গোষ্ঠীর প্রতিনিধি সত্যনারায়ণ দোসাপাতি পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পপন্থী মিছিলের আয়োজক ছিলেন এবং ভারতে বিজেপি–ঘনিষ্ঠ রাজনীতিতেও যুক্ত তিনি।
কাজল শিংগালা জোহরানকে ‘জিহাদি জম্বি’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তাঁকে মেয়র নির্বাচিত করা হলে নিউইয়র্ক হয়ে উঠবে আরেকটি পাকিস্তান। ভারতের শীর্ষ ১০ বিদ্বেষী বক্তার তালিকায় থাকা শিংগালার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট মুসলিমবিদ্বেষী কনটেন্টে (আধেয়) ভরা। তিনি মুসলিম পুরুষদের সন্ত্রাসী, ধর্ষক ও ‘লাভ জিহাদি’ বলে আখ্যা দেন।
‘নিউইয়র্কবাসী প্রতারিত হবে না’
বিশ্লেষকদের মতে, নিজের মুসলিম ও ভারতীয় পরিচয়, ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান এবং হিন্দুত্ববাদবিরোধী মনোভাব—এ তিনটি কারণে জোহরান উগ্রপন্থীদের নজরদারিতে রয়েছেন।
রাটগার্স ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক অড্রে ট্রুশকে বলেন, ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের আক্রমণ একেবারে অনুমেয়। নিউইয়র্কবাসী এই ঘৃণার ফাঁদে পড়বেন না।’
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডেভিড লাডেন বলেন, জোহরানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো, যেমন ‘হিন্দুবিরোধী’, ‘ভারতবিরোধী’, ‘ইসরায়েলবিরোধী’—সবই একই ইসলামবিদ্বেষী যুক্তির ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যা ভিত্তিহীন।
এই অধ্যাপক বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদ ও জায়নিজম—উভয় মতবাদ একই জাতীয়তাবাদী চিন্তার ওপর দাঁড়িয়ে। এখানে একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকে ভূমি ও সম্পদের একচ্ছত্র মালিকানা দেওয়া হয়। রাজনৈতিকভাবে মোদি ও নেতানিয়াহু সরকার ইসলামকে শত্রু হিসেবে দেখায় এবং জাতীয় অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ তুলে ধরে। এর মাধ্যমে জাতিকে রক্ষার নামে নিজেদের সহিংসতা, আগ্রাসন, এমনকি গণহত্যাকে বৈধতা দেয়।’
ডেভিড লাডেন বলেন, এসব মতবাদ বিশ শতকের শুরুর দিকের ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী চিন্তার ধারাবাহিকতা, যা বর্তমানে বৈশ্বিক ইসলামবিদ্বেষকে উৎসাহ দেয়।
স্বাধীন সকাল ডেস্কঃ ট্রাম্পবাদ ও হিন্দুত্ববাদ—এক যৌথ মঞ্চ
ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন প্রবল। অভিবাসনবিরোধী, মুসলিমবিরোধী ট্রাম্পের রাজনীতি তাঁদের মন জয় করেছে।
২০১৯ সালে ট্রাম্প হিউস্টনে মোদির পাশে দাঁড়িয়ে ৫০ হাজার লোকের সামনে বলেছিলেন, ‘মোদি হলেন আমেরিকার সবচেয়ে বড় বন্ধুদের একজন।’
জোহরান প্রাইমারিতে জেতার পর ট্রাম্প তাঁকে ‘খ্যাপাটে কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যা দিয়ে একাধিকবার আক্রমণ করেছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টিও এর জবাবে শক্ত অবস্থান নেয়নি।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা সীমা অতিক্রম করেছেন। জোহরান একজন শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে জিতে মেয়র হতে চলেছেন। এর আগে র্যাডিক্যাল লেফটিস্ট পেয়েছি, কিন্তু এটা সীমার বাইরে।’
হোয়াইট হাউসের এক নৈশভোজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সামনে ট্রাম্প আবার বলেন, ‘ও এখন একটু হানিমুন পিরিয়ডে আছে। তবে টিকে থাকতে চাইলে হোয়াইট হাউস থেকে সাহায্য লাগবে। ওকে ভদ্র হতে হবে, না হলে বড় সমস্যায় পড়বে।’
‘হিন্দুত্ববাদী ও জায়নিস্টদের জন্য এক হুমকি’
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মানান আহমেদ বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদী ও ট্রাম্পপন্থীদের মধ্যে একটি বিশ্বব্যাপী ফ্যাসিস্ট মেরু তৈরি হয়েছে। মামদানির প্রার্থিতা যেন সেই রাজনীতির বিরুদ্ধে এক প্রমাণ।’
মানান আহমেদ বলেন, জোহরানের মতো যেকোনো প্রগতিশীল ব্যক্তি, বিশেষ করে মুসলিম হলে—এই কট্টরপন্থীদের নিশানা হয়ে উঠবেন।
স্বাধীন সকাল ডেস্কঃ ‘যদি আপনি বামপন্থী রাজনীতির ধারায় থাকেন, আপনাকে নিশানা করা হবেই। আপনি যদি মুসলিম হন, তখন বাড়তি ভাষা ও কৌশল ব্যবহার করা হবে,’ বলেন মানান আহমেদ। তিনি আরও বলেন, এ কারণে হিন্দুত্ববাদী ও জায়নিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে মিথ্যা প্রচার চালাতে পারে, যেমনটা তারা ফিলিস্তিনি বা গাজা সমর্থকদের বিরুদ্ধে করেছে।
‘সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বা সিয়াটলের কাউন্সিল সদস্য ক্ষমা সাওয়ান্ত, যিনি সম্প্রতি জাতবৈষম্য নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব এনেছেন—তাঁরা সবাই এই ঘৃণার নিশানা হয়েছেন,’ বলেন অধ্যাপক মানান।
মানান আহমেদ আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুত্ববাদী কাঠামো শক্তিশালীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। তাই নিউজার্সি থেকে কেউ উড়োজাহাজ ভাড়া করে নিউইয়র্কের আকাশে ব্যানার ওড়াতে পারে।’
‘জোহরান যেহেতু স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনপন্থী; তাই হিন্দুত্ববাদী ও জায়নিস্টদের জন্য এক হুমকি তিনি। তাঁরা চান না, এমন কেউ প্রার্থী হোন, যিনি তাঁদের প্রশ্নের মুখে ফেলবেন,’ বলেন মানান আহমেদ।